ঢাকা | | বঙ্গাব্দ

খন্দকার আবুল খায়ের : দাউদকান্দির দশপাড়া গ্রামের মূর্তিমান আতঙ্ক

author
Reporter

প্রকাশিত : Jun 30, 2025 ইং 7 বার পড়েছে
ছবির ক্যাপশন:
ad728

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি কর্মকর্তা হয়েও আচরণ ছিঁচকে পাতি নেতার মতো। ডিগবাজি দিয়ে রাতারাতি রাজনৈতিক দল পরিবর্তন করে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। তার ভয়ে এলাকার বেশিরভাগ মানুষ তটস্থ। কতিপয় অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার সাথে দহররম-মহরম থাকায় কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাননি। তিনি খন্দকার আবুল খায়ের। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার দশপাড়া গ্রামের মৃত শাহজাহান মাস্টারের ছেলে। পেশায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিএনপি’র ক্যাডার হিসেবে ভূমিকা রাখার সুবাধে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের আশির্বাদে চাকরিপ্রাপ্ত হন। সে সময়ও ব্যাপক দলবাজির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিশেষ করে ‘তারেক পরিষদ’ নাম দিয়ে ভূঁইফোর সংগঠন খুলে দেশের বিভিন্ন জেলা ও থানা কমিটি দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার খবর ছিল এলাকার মানুষের মুখে মুখে। তবে রাজনৈতিক কালিমা দূর করা ও ক্ষমতার সুবিধা নিতে সম্প্রতি কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগে। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা উদারতার কারণে তাকে বরণ করে নেয়।

কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বেড়িয়ে আসে তার আসল খোলনলচে। বিএসএমএমইউ-তে চাকরির সুবাধে এরই মধ্যে দাউদকান্দি থানার দু’একজন এসআই’র সাথে সখ্য গড়ে উঠে। তাদের প্রভাব কাজে লাগিয়ে এলাকায় কায়েম করেন রামরাজত্ব। তার সাঙ্গপাঙ্গদের দাপটে অসহায় হয়ে পড়েন ত্যাগী ও নিবেদিত প্রাণ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে স্কুল, মাদ্রাসা ও মসজিদ কমিটিতে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা, নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী গঠন করে অস্ত্রের মহরা, চাঁদাবাজি এবং প্রকৃত আ’লীগ কর্মীদের শায়েস্তা করাই যেন তার মূল এজেন্ডা। এ কারণে চাকরিস্থল থেকে সময়-অসময়ে বাড়ি চলে আসেন। এসে গায়ে পড়ে অন্যদের সাথে বিবাদে জড়ান। যাকে-তাকে মারধর করান নিজস্ব বাহিনী দিয়ে। এতে করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে অভিযোগ খোদ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবলীগ কর্মী বলেন, দলে যোগ দেয়ার পর থেকেই খন্দকার আবুল খায়ের বেপরোয়া আচরণ করতে থাকেন। কারণ ইতিপূর্বে এই এলাকার কোনো যুবক অস্ত্রের রাজনীতির সাথে পরিচিত ছিল না। কিন্তু  ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতাকর্মী ও পুলিশের ছত্রছায়ায় তিনিই প্রথম অস্ত্রের রাজনীতি শুরু করেন। দশপাড়ার বেশিরভাগ যুবকের কাছে  ছুরি-পিস্তল এখন মামুলি ব্যাপার। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের দু’একটি ঘটনায় দেখা গেছে তুচ্ছ বিষয়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি। যা এলাকাবাসীকে হতবাক করেছে। এসব অস্ত্রবাজির নেতৃত্বে রয়েছেন তার অন্যতম সহযোগী ওহাব পাঠান, আমির, আলম বেপারী, বাবু ও শরীফ পাঠান। 

সর্বশেষ গত ১৮ নভেম্বর এ অভিযোগের চূড়ান্ত দৃশ্য দেখতে পান এলাকাবাসী। সেদিন দশপাড়ায় একটি মাজার জিয়ারত করতে আসা সুন্দলপুর ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মাহাবুবুর রহমান বাবুলের আত্মীয়দের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় তার লোকজন। এতে যুবলীগ নেতা মাহাবুবুর রহমান বাবুল, মজিবুল হক, নাছিরুল কবিরসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় নিজাম উদ্দিন, খোকা মিয়া, আব্দুল ওহাব, খন্দকার আবুল খায়ের ও মো. জালাল খন্দকারকে অভিযুক্ত করে মাজার জিয়ারত করতে আসা কাজী রেহা কবির বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগটি মামলা হিসেবে থানায় রেকর্ড না হলেও ওই এলাকার আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ এনে উল্টো যুবলীগ সভাপতি মাহাবুবুর রহমান বাবুল ওই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা জালাল কন্ট্রাক্টরের ছেলে মেহেদী হাসানসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২৫-৩০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করা হয়।

মামলার ৩নং আসামি সুন্দলপুর ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মাহাবুবুর রহমান বাবুল জানান, মামলার বাদী আব্দুল ওহাব পাঠান বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। 

ক্ষোভ প্রকাশ করে একাধিক বাসিন্দা জানান, পাল্টাপাল্টি মামলায় এলাকায় বিশৃঙ্খল পরিবেশ বিরাজ করছে। এর প্রধান মাস্টারমাইন্ড খন্দকার আবুল খায়ের, আমির ও ওহাব পাঠান। তাদের উৎপাতে এলাকায় নতুন বাড়ি করা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই চাঁদাবাজি ও হয়রানির শিকার হচ্ছে মানুষ। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন আমির ও খায়ের সরকারি চাকরি করেও কিভাবে এলাকার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে পারেন। তাদের অফিসিয়াল কাজ ঢাকায় হলেও দূরত্ব কম থাকার কারণে হুটহাট করে বাড়ি এসে সবক্ষেত্রই খবরদারি করেন। যা সমীচীন নয়। 

আরেক মুদি ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেন বলেন, এখনই তাদের লাগাম টেনে না ধরলে এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আরও নষ্ট হবে। তবে সম্প্রতি খায়েরসহ তার কয়েক সহযোগী গ্রেফতারের খবরে এলাকায় স্বস্থি নেমে এসেছে বলে তিনি জানান। তিনি অবিলম্বে অন্য সহযোগীদের বিচার দাবি করেন। তবে কারাগারে থাকার কারণে এ বিষয়ে খন্দকার আবুল খায়েরের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

দাউদকান্দি থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, একটি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি কারাগারে রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তার বিরুদ্ধে আর কোনো অভিযোগ পাইনি। 



সংবাদটি শেয়ার করুন :

নিউজটি আপডেট করেছেন : Reporter

কমেন্ট বক্স
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ ভয়েস অফ কুমিল্লা
সকল কারিগরী সহযোগিতায় A2SYS